এন-কোভিড১৯ সংক্রমণের প্রাদুর্ভাবের শুরুর সাথে সাথেই শুরু হয় নানান ধরণের গুজব রটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন – এই দুই দেশের ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা উঠেপড়ে লাগে নিত্যনতুন গুজব ছড়াতে। মার্কিন ষড়যন্ত্র বাতিকদের মতে চীনের উহান শহরে এক লেভেল ফোর বায়ো-সেফটি ল্যাবরেটরি থেকে এই ভাইরাসটির উৎপত্তি। এই ধরণের গবেষণাগারগুলিতে বৈজ্ঞানিকরা ইবোলা ভাইরাসের মতো পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুদের ওপরে গবেষণা করে থাকেন। এই গবেষণাগারগুলি স্বভাবতই গভীর সুরক্ষায় মোড়া থাকে। তাই উহানে শুধুমাত্র এরকম একটি গবেষণাগারের উপস্থিতি এটি প্রমাণ করে না যে এখানেই জেনেটিক ভাবে পরিবর্তন করে তৈরি করা হয়েছে এন-কোভিড১৯।
অপরদিকে, চীনের ষড়যন্ত্র বাতিকেরা দায়ী করেছে মার্কিন সেনাবাহিনীকে এই ভাইরাসটির জন্য। কিন্তু বৈজ্ঞানিমতে, এন-কোভিড১৯ মানুষের তুলনায় বাদুড় বা প্যাঙ্গোলিনকে সংক্রমিত করা ভাইরাসগুলোর সাথেই বেশি মেলে। যদি এন-কোভিড১৯ সত্যিই এক জৈবিক মারণাস্ত্র হতো তবে এটিকে মানব সংক্রমণকারী কোনো ভাইরাসের থেকেই তৈরী করা হয়ে থাকতো। এই ভাইরাসটির জেনেটিক তথ্য ব্যবহার করে, গবেষকরা এর বংশলতিকা তৈরী করেছেন। এই বংশবৃত্তান্ত থেকে জানা যায় যে ভাইরাসটি কি করে এক আশ্রয়দাতা থেকে আরেকটিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের মতে, ভাইরাসটি কিছু পশুর থেকে মানুষকে সংক্রামিত করেছে।
কি এই জৈবিক মারণাস্ত্র?
অতীতে, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের মতো ক্ষতিকারক রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু ও তাদের দ্বারা নিঃসৃত কিছু সর্বনাশা অধিবিষকে (টক্সিন) জৈবিক মারণাস্ত্র রূপে ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্যাথোজেনগুলিকে যুদ্ধের সময় পরিকল্পিত ভাবে শত্রূপক্ষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এমন এক জীবাণুর উদাহরণ হল ব্যাসিলাস আন্থ্রাসিস যা আন্থ্রাক্স রোগের জন্য দায়ী এবং এর আগে জৈবিক মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ।
জৈবিক মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত প্রায় সব প্যাথোজেনই প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি করে। কোভিড১৯ র সংক্রমণের ফলে বহু মানুষ গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও এ রোগের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার খুব বেশি নয়, অনেকে সুস্থ ও হয়ে উঠছেন । তাই, এন-কোভিড১৯ একটি জৈবিক মারণাস্ত্র, এই দাবির পেছনে কোনো যুক্তিসঙ্গত প্রমান নেই!